স্বদেশ ডেস্ক:
অনেক ভোগান্তি ও বাড়তি ভাড়া গুনে নারায়ণগঞ্জ ছাড়ছে কাজের তাগিদে এখানে বসবাস করা বিভিন্ন জেলার মানুষ।
মঙ্গলবার (২৭ জুন) দুপুরে গার্মেন্টস ছুটির পর থেকে নারায়ণগঞ্জের সড়কগুলোতে ঈদে ঘরমুখো মানুষের ঢল নামে।
মানুষের ভিড় বাড়ায় বিভিন্ন পরিবহন বাড়িয়ে দিয়েছে ভাড়া। কোনো কোনো পরিবহন দ্বিগুণ-তিনগুণ ভাড়া আদায় করছে। রিকশাচালক থেকে শুরু করে বাস সবাই আদায় করছে কয়েক গুণ বেশি ভাড়া।
ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের সাইনবোর্ডে গিয়ে দেখা গেছে, গাজীপুরগামী অনাবিল পরিবহন ২০০ টাকা করে ভাড়া নিচ্ছে। আগে এ রুটে ভাড়া ছিল ৮০ টাকা।
যাত্রী মোজাম্মেল হক নয়া দিগন্তকে জানান, ‘৮০ টাকার ভাড়া ২০০ টাকা নিচ্ছে। কিছুই করার নাই। আমরা অনেকটা অসহায়।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঈদযাত্রায় বাড়তি ভাড়া ও বৃষ্টিতে ভোগান্তি নিয়ে বাড়ি যাচ্ছেন ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের যাত্রীরা। সকাল থেকে এই দুই মহাসড়কের মোড়ে মোড়ে ঘরমুখো মানুষের ঢল নামে। মহাসড়কে যানজট না থাকলেও গাড়ির চাপ রয়েছে দ্বিগুণ। আর যাত্রীদের হয়রানি ঠেকাতে মাঠে কাজ করছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
মঙ্গলবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত দুই মহাসড়কের ১৬টি জেলার মানুষ বাড়ির উদ্দেশে বের হন। এ কারণে বেলা যত গড়ায় যাত্রী ও যানবাহনের চাপও তত বাড়ে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশে ৩০ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে সাইনবোর্ড, শিমরাইল, কাঁচপুর, মদনপুর, কেওডালা, মোগরাপাড়াসহ মেঘনা টোল প্লাজা পর্যন্ত বিভিন্ন মোড়ে বৃষ্টিকে উপেক্ষা করেই যাত্রীদের অবস্থান নিতে দেখা গেছে। অগ্রিম টিকেট কেটেও যানবাহন না পেয়ে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষায় ছিলেন বেশিরভাগ যাত্রী।
একই অবস্থা ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কাঁচপুর থেকে আড়াইহাজারের পুরিন্দাবাজার পর্যন্ত। এ সড়কের যাত্রামুড়া, তারাবো, বরাবো, রূপসী, কর্ণগোপ, ভুলতার আশপাশের এলাকায় এবং আলকা থেকে কিছুটা যানজট রয়েছে। এতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছে নারী ও শিশুরা। বৃষ্টিতে ভিজে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকাসহ অতিরিক্ত ভাড়া গুণতে হয়েছে তাদের।
লক্ষ্মীপুরগামী এক যাত্রী সাইনবোর্ড এলাকায় বলেন, কয়েক দফায় বৃষ্টিতে ভিজলাম। একা থাকলে কোথাও না কোথাও দাঁড়াতে পারব। কিন্তু সাথে বউ-বাচ্চা আছে, তারা কী করবে। প্রতিবারই মহাসড়কে ভোগান্তি নিয়ে বাড়ি ফিরতে হয়।
শিমরাইল এলাকায় কথা হয় তামিমের সাথে। তিনি যাবেন নোয়াখালী। বলেন, এমনিতেই ভোগান্তি তার ওপর আবার টিকেট কাটতে হলো ১০০ টাকা বেশি দিয়ে।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের তারাবো ও বরাবো এলাকায় যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় রয়েছে। সেখানে শাহজাহান মিয়া নামের এক যাত্রী বলেন, ‘পরিবারের লোকজনকে আগেই বাড়ি পাঠিয়েছিলাম। বাড়ি সুনামগঞ্জে। বাস এখনো আসছে না। টিকেট তো বেশি টাকা দিয়েই কিনতে হবে। এ ছাড়া তো আর উপায় নেই।’
এ মহাসড়কের কাঁচপুর এলাকায় কথা হয় সৈকত আলী নামের এক যাত্রীর সাথে। তিনি বলেন, ‘রাস্তা তো দুই লেন। বেশি গাড়ি, যানজট তো লাগবেই। বাসে উঠার সময় দেখলাম তারাবো এলাকায় গাড়ির দীর্ঘ লাইন। সেইসাথে বৃষ্টি পড়ছে।’
এদিকে, যাত্রী ভোগান্তি কমাতে বাসস্ট্যান্ডগুলোর সামনে অবস্থান নিয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। শিমরাইল এলাকায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফারাশিদ বিন এনাম জানান, যারা যাত্রীদের হয়রানি করছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে লাল-সবুজ নামের একটি পরিবহনের কাউন্টারম্যানকে বেশি ভাড়া নেয়ার অভিযোগে আটক করা হয়েছে।
এই ঈদে রাজধানী ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জসহ আশপাশের অঞ্চলের ২৫ লাখের বেশি মানুষ পূর্ব-দক্ষিণের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছেন বলে জানান শিরাইল পুলিশ ক্যাম্পের পরিদর্শক শরফুদ্দিন আহাম্মেদ। তিনি বলেন, ‘প্রায় ৮০ হাজারের মতো গাড়ি রাজধানী থেকে চট্টগ্রাম ও সিলেটে যাতায়াত করছে। এর সাথে আবার পশুবাহী যানবাহন চলাচল রয়েছে। এ কারণে গাড়ির চাপ কয়েকগুণ বেড়েছে। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত যাত্রীর ঢলও নেমেছে। পুলিশ চেষ্টা করছে যানজট ছাড়াই মানুষকে নারায়ণগঞ্জ অংশ পার করতে। নারায়ণগঞ্জ অংশে ১২ থেকে ১৫টি পয়েন্টে হাইওয়ে পুলিশ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।’
হাইওয়ে পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ‘দুটি মহাসড়কে চার শতাধিক পুলিশ কাজ করছে। এর সাথে রয়েছে টহল টিম ও রেকার গাড়ি। কোথাও কোনো যানজট বা দুর্ঘটনার খবর পেলে সাথে সাথে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি পশুবাহী যানবাহনের কারণে যানজট সৃষ্টি না হয়, সেদিকেও নজর রয়েছে। দুটি মহাসড়কের কোথাও বড় ধরনের যানজট নেই। তবে গাড়ি ও যাত্রীর চাপ রয়েছে।’